ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ নিয়ে রাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের প্রতি নির্বাচিত সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু কর্তব্য থাকে। এসব কর্তব্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই পালন করতে হয়। জনগণের সুশৃঙ্খল জীবন পরিচালনায় রাষ্ট্রের অনেক অঙ্গ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জননিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত সবাই জনগণের প্রতিনিধি। তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। দেশের জনগণকে সুুষ্ঠু সুন্দর সুশাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে এসব জনপ্রতিনিধির ভূমিকা রাখার কথা।
মন্ত্রিসভার মাধ্যমে দেশের সব প্রশাসন চলে। দেশের সব জেলায় জেলা প্রশাসক এবং বিভাগের প্রধান বিভাগীয় কমিশনার রয়েছেন। তারা রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী। দেশের সব ধরনের ভালো মন্দের খবর তারা রাখেন। জনগণের সুখ শান্তি নিরাপত্তা সব কিছু উল্লিখিত প্রশাসনের নাগালের মধ্যেই থাকার কথা। জনগণের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পাঁচ শতাধিক পুলিশি থানা রয়েছে। এর বাইরেও অসংখ্য পুলিশ ফাঁড়ি নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। এতসব কিছু শুধু নাগরিক প্রশান্তির জন্য। জননিরাপত্তা ও সামাজিক শান্তির জন্যই রাষ্ট্রের এসব বিভাগ। তবু সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা শান্তি মোটেও মিলছে না।
একেক সময় একেক ধরনের গুজব ছড়িয়ে সামাজিক ও নাগরিক শান্তিÍ নষ্ট করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে পদ্মা সেতুতে মানুষের কল্লা চায়, এমন ধরনের গুজব ছড়িয়ে সারা দেশে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। এ গুজব টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে ধরার নামে শিশু শিক্ষা নিকেতনে ভয়ভীতি চলছে। অনেক জায়গায় ছেলেধরা নামে গণপিটুনিতে নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এসব বিষয় রাষ্ট্রের অগোচরে নয়। কথা হলো, একটা বিষয় যখন ভয়াবহ অপরাধ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে; তখন রাষ্ট্রের টনক নড়ে। এটি কেন? কারা এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে? তা রাষ্ট্র আগেভাগে কেন জানে না, রাষ্ট্রের এত সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকতে দেশবিরোধী জননিরাপত্তা ধ্বংসকারী চক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো কেন উদঘাটন করতে পারে না, তা এখন জনগণের কাছে বড় প্রশ্ন। এসব বিষয়ে কী উত্তর আর কী সমাধান, রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সেই বিষয়ে ভাবতে হবে। দেশ যখন উন্নয়ন অগ্রগতি এবং জাতীয়ভাবে কর্মসংস্থান প্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে, ঠিক তখনই দেশে বিচিত্র সব উপায়ে গুজব ও জাতিবিরোধী ষড়যন্ত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। দেশ নানাভাবে অর্থনৈতিকভাবে সফলতার সিঁড়ি অতিক্রম করছে; তখন দেশী-বিদেশী নানামুখী চক্রান্ত চলছে।
১৭ জুলাই বাংলাদেশের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির একটি দেশের বিরুদ্ধে দেশের এক নারী নাগরিক বিদেশে স্বদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার জন্য নালিশ করেছেন। এটি নিয়ে প্রতিদিন গণমাধ্যমে বিশ্লেষণ ও প্রতিবাদ আসছে। ক্ষমতাসীন ও রাজনৈতিক, সামাজিকসহ দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছে ওই নারীর বিরুদ্ধে।
একটি কথা এখন দেশের সর্বত্রই শুনতে পাচ্ছি, সেটি হচ্ছে, এসবের মধ্যে দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আট-দশ দিন আগের খবর, বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিছুই জানেন না। অথচ বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বছরে অন্তত পাঁচবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তার দেশের অনেক এনজিও সেখানে কর্মরত। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করছে। সারা দুনিয়ায় নানাভাবে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সমালোচনা করা হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি উন্নয়নে গভীর সঙ্কট। এ সঙ্কটের পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র পরিষ্কার। যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন আমাদের জন্য এক নম্বর দাবি। এটা দ্রুততার সাথে সমাধান করতে সরকারকে সব কিছুর ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।
যেসব বিষয় আলোচনায় আনা হয়েছে, সব কিছুর সাথে একটা যোগসূত্র রয়েছে। রাষ্ট্রকে অস্থির করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং আইনের শাসন ধ্বংস করতে পারলে বিদেশী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে সহজ হয়। সে ধরনের পরিস্থিতির দিকে দেশকে নেয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে একটি কুচক্রী মহল। শক্ত হাতে রাষ্ট্রকে এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে। কোথা থেকে এসব আসছে এবং নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে তা বের করার দায়িত্ব দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।
গুজব ছড়িয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে চক্রান্তকারীরা একের পর এক ঘটনা ঘটাতে থাকলে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী যেই হোক, তাকে প্রচলিত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে দেশ ও জাতির স্বস্তির স্থিতিশীল পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের।
লেখক: প্রাবন্ধিক